হোয়াইট স্পট ইক হচ্ছে অ্যাকুরিয়াম মাছের খুব সাধারন একটি রোগ। ফ্রেশওয়াটার মাছের এ রোগটি দেখা যায় খুব বেশী। প্যারাসাইট জনিত এই রোগে আক্রান্ত হলে মাছের গায়ে সাদা সাদা লবণের মত দানাদার কিছু আস্তরন দেখা যায়। আক্রান্ত মাছ অ্যাকুয়ারিয়ামের ভিতরের প্ল্যাস্টিকের খেলনা বা গাছের গায়ে নিজের শরীর ঘসবে। মাছের ডরসাল ফিনগুলি ভেঙ্গে পড়বে । মাছ তার ফুলকা ব্যাবহার করে পানি থেকে অক্সিজেন নিতে পারবে না, সে পানির উপরের ভাগে উঠে এসে বসে থাকবে। এক পর্যায়ে মাছটি মারা যাবে।
তাপমাত্রার পরিবর্তন, সাধারনত মাছ দুর্বল থাকলে, স্ট্রেসড থাকলে এবং পানির তারতম্য ঘটলে বা আরো একটু স্পেসিফিকেলি বলতে গেলে হুট করে পানির PH এর তারতম্য ঘটলে মাছের এই হোয়াইট স্পট বা ইক হয়।
আমরা সবাই জানি যে প্রতিকারের থেকে প্রতিরোধ সব সময় শ্রেয়তর। কাজেই হোয়াইট স্পট প্রতিরোধ করাটাই সবচে বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
সঠিক নিয়মে মাছ ট্যাঙ্কে ছাড়তে হবে। ট্যাঙ্কে নতুন মাছ ছাড়বেন প্রথমে কিছুক্ষণ মাছের পলিথিনটি ট্যাঙ্কে ভাসিয়ে রাখুন, ১০-১৫ মিনিট পর ট্যাঙ্ক হতে অল্প পানি নিয়ে আস্তে আস্তে পলিথিনে ভরতে হবে। এর পর একটি বালতি বা পাত্রের উপর একটি নেট ধরে ব্যাগ থেকে মাছ ট্যাঙ্কে ছাড়তে হবে।
এখানে সর্বাপেক্ষা গুরত্বপুর্ন হল কোন অবস্থাতেই পলিথিনের পানি যেন ট্যাঙ্কে প্রবেশ না করে।
আপনার যদি একাধিক ট্যাঙ্ক থেকে থাকে তাহলে প্রতিটি ট্যাঙ্কের জন্য আলাদা আলাদা নেট ইউজ করবেন। ভুলেও এক নেট সকল ট্যাঙ্কে দিবেন না।
কোয়ারাইন্টাইন বা হসপিটাল ট্যাঙ্ক হল ছোট একটি ট্যাঙ্ক যেখানে বাজার থেকে নতুন মাছ এনে প্রথমেই মূল্ ট্যাঙ্কে না রেখে এখানে রাখা। দরকারে ১ সপ্তাহ পর্যন্ত তাকে পর্যবেক্ষন করা। এরপর তাকে মূল ট্যাংকে স্থানান্তর করা।
কিভাবে বানাবেন একটি পারফেক্ট কোয়ারাইন্টাইন বা হসপিটাল ট্যাঙ্ক ?
কোয়রারাইন্টাইন ট্যাঙ্কের জন্য অনেকে ১০-১২ গ্যালনের ট্যাঙ্ক বানাতে বলে তবে আমার সাজেশন থাকবে নীচের লিংকের ১৫ কিউবের ট্যাঙ্কটি নেওয়ার
কোয়ারাইন্টাইন ট্যাঙ্কে অবশ্যই হিটার লাগবে। নীচের লিংকের দেওয়া হিটারটি আপনার জন্য পারফেক্ট হবে
সুনির্দিস্ট তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য যে কোন কোয়ারাইন্টাইন বা হসপিটাল ট্যাঙ্কে থার্মোমিটার অপরিহার্য। নীচের লিংকের থার্মোমিটারটি হবে এক্ষেত্রে পারফেক্ট।
কোয়ারাইন্টাইন ট্যাঙ্কেও লাইট লাগবেই। আপনার এই ট্যাঙ্কের জন্য সবচে ভাল হবে এই লাইটটি।
ব্যাস হয়ে গেল আপনার কোয়ারাইন্টাইন ট্যাঙ্ক। এখানে একটি জিনিস উল্লেখ্য যে মাছের সাথে সাথে গাছের ক্ষেত্রেও এটি সমানভাবে কাজ করে। কাজেই দোকান বা অন্য হবিস্টদের থেকে গাছ আনলে সেটাকে প্রথমে এই ট্যাঙ্কে রাখুন। না হলে আপনার মূল ট্যাঙ্কে মাছের হোয়াইটস্পট বা ইক গাছের বয়ে নিয়ে যাওয়া জীবাণু থেকেও হতে পারে।
১। একুরিয়ামে কোন মাছের মধ্যে রোগের লক্ষন দেখা মাত্র মাছটিকে ট্যাঙ্ক থেকে আলাদা করে কোয়ারাইন্টাইন বা হসপিটাল ট্যাঙ্কে নিতে হবে । যদি প্লান্টেড ট্যাঙ্ক না হয় তবে মাছ গুলোকে মেইন ট্যাঙ্কে রেখেই চিকিৎসা করা ভাল।
২. প্রথমেই ট্যাঙ্কের ৯০% পানি পরিবর্তন করুন (যদিও এটি নিয়ে বিতর্ক আছে তবে আমরা এতে ভাল ফল পেয়েছি )
৩. ট্যাঙ্কে হিটার সংযুক্ত করুন এবং প্রতি ঘণ্টায় পানির তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস করে বৃদ্ধি করতে থাকুন যতক্ষণ না পানির তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়।
৪. ট্যাঙ্কের তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাখুন ১০ দিন পর্যন্ত।
৫. ট্যাঙ্কের ফিল্টারে কোন মিডিয়া থাকলে তা পরিবর্তন অথবা ভাল করে পরিস্কার করুন।
৬. পানিতে এক্সট্রা এয়ার স্টোন অথবা স্পঞ্জ ফিল্টার এড করতে পারেন
৭. যদি ট্যাঙ্কে ইল/লোচ অথবা ক্যাট ফিশ ধরণের মাছ না থাকে সে ক্ষেত্রে ট্যাঙ্কে লবন এড করতে পারেন। অবশ্যই আয়োডিনযুক্ত লবন পরিহার করতে হবে। বাজারে বেশীরভাগ লবনেই আয়োডিন আছে তাই সেসব না দিয়ে আমার সাজেশন থাকবে মেরিন ট্যাঙ্কের লবন ব্যাবহার করতে। ব্যাবহার করতে পারেন রেড সি প্রো সল্ট। কিনতে নীচের লিংকে ক্লিক করুন
৮. ১-২ টেবিল চামচ প্রতি ৫ গ্যালন পানিতে ব্যাবহার করতে পারেন। ছোট এবং দুর্বল মাছের জন্য কম পরিমান এবং বড় মাছের জন্য বেশি পরিমান লবন ব্যাবহার করতে পারেন।
৯. লবন কখনই সরাসরি ট্যাঙ্কে দিবেন না। অবশ্যই ছোট মগ অথবা বোতলে আগে গলিয়ে নিবেন এর পরে লবন গোলা পানি একুরিয়ামে যুক্ত করবেন।
১০. প্রতিদিন ৭৫% পানি পরিবর্তন করুন কিন্তু অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন যাতে পানিতে ক্লোরিন বা ব্লিচ না থাকে। ( এজিং করা পানি ব্যাবহার করা সব থেকে নিরাপদ)
১১. মৃত মাছ সাথে সাথে ট্যাঙ্ক থেকে সড়িয়ে ফেলুন। আক্রান্ত ট্যাঙ্ক এ কাজ করে অন্য কোন ট্যাঙ্কে কাজ করতে গেলে অবশ্যই হাত ভাল করে ধুয়ে নিবেন।
১২. মাছের গা থেকে সাদা স্পট চলে যাবার পরেও তিনদিন পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চালিয়ে যান।
১৩. ১০-১৫ দিন এই চিকিৎসা চলতে পারে।
প্রতিকারের থেকে প্রতিরোধ উত্তম। কাজেই হোয়াইটস্পট বা ইচের বির্যুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। কোয়ারাইন্টাইন বা হসপিটাল ট্যাঙ্ক বানান।